ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা

বিভিন্ন ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখাসমূহ ইসলামকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। এই সম্প্রদায়সমূহ বিভিন্ন মাযহাব ও আকিদা অনুসরণ করে থাকে। এমনকি এসব শাখা ও সম্প্রদায়ের ভেতরেও বিভিন্ন উপশাখা আছে যেমন সুফিবাদে নানারকম তরিকা, সুন্নি ইসলামে নানারকম ধর্মত্বত্ত্ব যেমন আসারি, আশআরি, মাতুরিদি ইত্যাদি এবং আইনি কাঠামো যেমন হানাফি, মালিকি, শাফিঈ, হাম্বলি ইত্যাদি। এইসব শাখা ও সম্প্রদায় ছোট (যেমন ইবাদি, জায়েদি, ইসমাইলি) থেকে বড় (যেমন শিয়া, সুন্নি) হতে পারে। ইসলাম বিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিদের বাইরে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে এইসকল শাখা-সম্প্রদায়ের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি থাকতে পারে অথবা এই শাখা-সম্প্রদায় সম্পর্কে তাদের মধ্যে এত বেশি আবেগ ছড়ানো হয়েছে যে এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে (যেমন রেজভী, দেওবন্দি, সালাফি, ওয়াহাবি।) আদর্শের উপর ভিত্তি করে কিছু অনানুষ্ঠানিক আন্দোলনও প্রচলিত আছে (যেমন ইসলামি আধুনিকতাবাদ, ইসলামবাদ।) পাশাপাশি আছে সুসংগঠিত সম্প্রদায় (যেমন আহ্‌মদীয়া, ইসমাইলি, নেশন অব ইসলাম।) কিছু শাখা-সম্প্রদায় অন্য শাখা-সম্প্রদায়সমূহকে তাকফির বা ধর্মত্যাগি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। যেমন সুন্নি মতাবলম্বিরা প্রায়শই আহমদিয়া, আলবীয়, কুরআনবাদী ও শিয়াদের ধর্মত্যাগি হিসেবে অভিহিত করে। কিছু শাখা-সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামের প্রাথমিক যুগ ৭ম ও ৯ম শতাব্দিতে। যেমন খারিজি, সুন্নি, শিয়া। আবার কিছু শাখা-সম্প্রদায়ের আগমন সাম্প্রতিক। যেমন ইসলামি নব্য-ঐতিহ্যবাদ, উদারতাবাদ, ইসলামি আধুনিকতাবাদ, সালাফি, ওয়াহাবি আন্দোলন এমনকি বিংশ শতাব্দিতে জন্ম নেওয়া নেশন অব ইসলাম। অনেক সম্প্রদায় আছে যারা তাদের সময়ে অনেক প্রভাবশালী থাকলেও বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই, যেমন খারিজি, মুতাজিলা, মুরজিয়া। যেসব মুসলিম কোনো শাখা-সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়, কিংবা যারা নিজেদের কোনো শাখা-সম্প্রদায়ের অংশ বলে পরিচয় দেয় না, অথবা যাদের কোনো স্বীকৃত শাখা-সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না তাদের অসাম্প্রদায়িক মুসলিম বা মুসলিমুন বি-লা তাইফা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা 
একটি ছক যেটি ইসলামের বিভিন্ন শাখা-সম্প্রদায় প্রদর্শন করছে। সুন্নি, শিয়া, ইবাদি, কুরআনবাদ, অসাম্প্রদায়িক মুসলিম, আহমদিয়া, নেশন অব ইসলাম এবং সুফিবাদ।


খারিজি, সুন্নি এবং শিয়াদের মধ্যে মূল বিরোধের সূত্রপাত হয় ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর পর মুসলিম সমাজে (উম্মাহ) তার রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় উত্তরাধিকার কে পাবে এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে। মূলত এই বিতর্কের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে খারিজিরা চরমপন্থি মতবাদ গড়ে তোলে যা প্রথাগত সুন্নি ও শিয়া মতাদর্শ থেকে ছিল একেবারেই আলাদা। শিয়ারা বিশ্বাস করে আলি ইবনে আবু তালিব (রা) হলেন মুহাম্মদ (সা)-এর প্রকৃত উত্তরাধিকার আর সুন্নিরা বিশ্বাস করে আবু বকর (রা) হলেন প্রকৃত উত্তরাধিকার। প্রথম ফিতনা (প্রথম গৃহযুদ্ধ) চলাকালীন সময়ে খারিজিরা শিয়া ও সুন্নি উভয় মতাদর্শ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাকফির সম্পর্কিত বিষয়ে বেশ উগ্রবাদী ধারণা পোষণ করতে থাকে। তাদের মতে শিয়া ও সুন্নি উভয় মতাদর্শের অনুসারীরা হয় অবিশ্বাসী (কাফির) নতুবা ভণ্ড মুসলিম (মুনাফিক) এবং তাদের ধর্মত্যাগ করার কারণে হত্যা করা উচিৎ।

শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতাদর্শগত বিভেদ আছে। সুন্নি ইসলামে প্রধানত চার ধরনের বিচারিক কাঠামো আছে, মালিকি, হানাফি, শাফিঈ এবং হাম্বলি। এই কাঠামোগুলো যথাক্রমে তাদের প্রতিষ্ঠাতা মালিক ইবনে আনাস, আবু হানিফা, ইমাম শাফিঈ এবং আহমদ বিন হাম্বল এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। শিয়া ইসলামে তিনটি বড় উপ-সম্প্রদায় আছে। এগুলো হলো ইসনা আশারিয়া, ইসমাইলি এবং জায়েদি। অধিকাংশ শিয়া ইসলাম অনুসারিরা ইসনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, যারা ১২ জন ইমামের নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। এমনকি শিয়া ইসলামের শিয়া শব্দের অর্থই হলো ১২। ২০১২ সালের একটি হিসাবে শিয়াদের মধ্যে ইসনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের সংখ্যা ৮৫ শতাংশ বলে ধারণা করা হয়। সকল প্রথাগত ইসনা আশারিয়া এবং ইসমাইলি সম্প্রদায়ের মানুষ জাফরি মাজহাব নামক আইনি কাঠামো মেনে চলে। জাফরি মাজহাবটি এর প্রতিষ্ঠাতা জাফর আস-সাদিক এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি শিয়া ইসলামের ষষ্ঠ ইমাম।

জায়েদি বা বাংলায় পঞ্চমী অনুসারিরা জায়েদ ইবনে আলীর নামে অভিহিত জায়েদি আইনি কাঠামো অনুসরণ করে থাকেন। শিয়া ইসলামের আরেকটি শাখা ইসমাইলি; নিজারি ইসমাইলি ও মুসতারি ইসমাইলি নামক নতুন দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। পরবর্তীতে মুসতারি ইসমাইলি আবার হাফিজি ইসমাইলি ও তৈয়বি ইসমাইলি শাখায় পুনঃবিভক্ত হয়। বোহরা হিসেবেও পরিচিত তৈয়বি ইসমাইলি আবার দাউদী বোহরা, সুলেমানি বোহরা এবং আলাভি বোহরায় বিভক্ত।

একইভাবে বিলুপ্ত খারিজিরা প্রাথমিকভাবে পাঁচটি বৃহৎ শাখায় বিভক্ত ছিল। এরা হল সুফ্রি, আযারিকা, নাজদাত, আদজারিতি এবং ইবাদি। এদের মধ্যে কেবল ইবাদিরা এখনও টিকে আছে। উল্লেখিত শাখা প্রশাখাগুলো ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক নতুন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটেছে। যেমন আহ্‌মদীয়া, কুরআনবাদী, আফ্রিকান-আমেরিকান মুসলিম।

প্রধান শাখা ও সম্প্রদায়সমূহ

সুন্নি ইসলাম

মূল নিবন্ধ: সুন্নি ইসলাম

সুন্নি ইসলাম এখন পর্যন্ত ইসলামের সর্ববৃহৎ শাখা। বিশ্বব্যাপী মোট মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ৮৫% মানুষ এই শাখার অন্তর্ভুক্ত। সুন্নি ইসলামকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বা আহলে সুন্নাহ নামেও অভিহিত করা হয়। সুন্নি শব্দটি মূলত সুন্নাহ শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সুন্নাহ শব্দের অর্থ হলো ইসলাম ধর্মের রাসূল মুহাম্মদ (সা) ও তার সহচরদের (সাহাবা) শিক্ষা, কর্ম ও উদাহরণ।

সুন্নিরা বিশ্বাস করে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর আগে, মুসলিম সমাজের (উম্মাহ) রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কে পাবে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলে যাননি। তারা মুসলিম সমাজের খলিফা হিসেবে আবু বকর (রা) এর নির্বাচনকে সমর্থন করে। সুন্নি মুসলিমরা ইসলামের প্রথম চার খলিফা, আবু বকর (৬৩২--৬৩৪), উমর ইবনুল খাত্তাব (উমর ১, ৬৩৪--৬৪৪), উসমান ইবন আফফান (৬৪৪--৬৫৬) এবং আলি ইবন আবি তালিব (৬৫৬--৬৬১) কে একত্রে খুলাফায়ে রাশেদীন বলে অভিহিত করে। সুন্নিরা এটাও বিশ্বাস করে যে খলিফা পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিকভাবে সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত করা সম্ভব। কিন্তু খুলাফায়ে রাশেদীনের পর এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং উমাইয়া ও অন্যান্যদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের কারণে খলিফা পদের পদায়ন বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। ১৯২৩ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটার পর মুসলিম বিশ্বে আর খলিফা দেখা যায়নি।

ঐতিহ্যবাহী সুন্নি আইনশাস্ত্র ও কালাম অনুসারীরা (যুক্তিবাদী ধর্মত্বত্ত্ব) এবং ইসলামবাদসালাফি আন্দোলন অনুসারীরা সনাতনী ইসলাম সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সুন্নি আইনশাস্ত্র ও কালাম অনুসারীরা যুক্তিভিত্তিক ধর্মত্বত্ত্বে বিশ্বাসী হলেও ওয়াহাবিআহলে হাদীস অনুসারীরা ইসলামি ধর্মত্বত্ত্বের উৎস কুরআনের আক্ষরিক অনুবাদ দিয়ে ইসলামকে ব্যাখ্যা করে। ইসলামি আধুনিকতাবাদ হল সালাফি আন্দোলনের একটি বিচ্ছিন্ন শাখা যেখানে মুহাম্মদ আবদুহ এর মত ইসলামি বুদ্ধিজীবীরা আধুনিকতাবাদকে মুতাজিলা মতবাদের আধুনিক সংস্করণের মাধ্যমে ইসলামে একীভূত করার চেষ্টা করেছিল।

শিয়া ইসলাম

প্রধান উপসম্প্রদায়সমূহ

গুলাত আন্দোলনসমূহ 

তথ্যসূত্র

Tags:

ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা সংক্ষিপ্ত বিবরণইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা প্রধান শাখা ও সম্প্রদায়সমূহইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা তথ্যসূত্রইসলামি সম্প্রদায় ও শাখাআকিদাআলবীয়আশআরিআসারিআহ্‌মদীয়াইবাদি ইসলামইসমাইলিইসলামবাদইসলামি আধুনিকতাবাদইসলামি নব্য-ঐতিহ্যবাদইসলামে উদারতাবাদওয়াহাবি আন্দোলনকুরআনবাদীখারিজিজায়েদিতরিকাতাকফিরদেওবন্দিনেশন অব ইসলামমাতুরিদিমাযহাবমালিকিমুতাজিলামুরজিয়ারেজভীশাফিঈশিয়া ইসলামসালাফি আন্দোলনসুন্নি ইসলামসুফিবাদহানাফিহাম্বলি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইউসুফইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়আদমসমরেশ মজুমদারবিশ্ব ব্যাংকজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)ধর্মীয় জনসংখ্যার তালিকাসাপদক্ষিণ কোরিয়াভিটামিনআমার সোনার বাংলাবাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিচট্টগ্রাম বিভাগবাংলাদেশের অর্থনীতিধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরাপলাশীর যুদ্ধবাংলা ভাষাপানিপথের প্রথম যুদ্ধসার্বজনীন পেনশনসমকামিতাভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪জনি সিন্সকলাঅসমাপ্ত আত্মজীবনীশনি (দেবতা)রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়এইচআইভিবাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)ঢাকাদেব (অভিনেতা)জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়াবাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকিশোর কুমারচট্টগ্রাম জেলাবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাবাংলাদেশি কবিদের তালিকাক্ষুদিরাম বসুভারতীয় জনতা পার্টিপ্রাকৃতিক দুর্যোগইমাম বুখারীহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগজনভি রাজবংশচ্যাটজিপিটিচিকিৎসকজাতীয় সংসদমালয়েশিয়াদ্বিতীয় মুরাদক্রিয়েটিনিনঅমর্ত্য সেনব্র্যাকতুলসীরশিদ চৌধুরীতাসনিয়া ফারিণপ্রেমালুপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)অষ্টাঙ্গিক মার্গআমাশয়কাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসশর্করালগইনভারতের ইতিহাসওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ইবনে বতুতালক্ষ্মীপুর জেলাইতালিউত্তম কুমারফরিদপুর জেলাদৈনিক ইনকিলাবরানা প্লাজা ধসআবু হানিফাবাল্যবিবাহপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০রামমোহন রায়🡆 More