আলী খামেনেয়ী: ইরানী রাজনীতিবিদ

সৈয়দ আলী হোসেইনী খামেনেয়ী (ফার্সি: سید علی حسینی خامنه‌ای; জন্ম ১৯ এপ্রিল ১৯৩৯) হলেন একজন ইরানি শিয়া মুসলিম ধর্মগুরু এবং ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের দ্বিতীয় ও বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইরানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। খামেনেয়ী মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রপ্রধান এবং মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পর গত শতাব্দীর দ্বিতীয় সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতাসীন ইরানি নেতা।

সৈয়দ আলী হোসেইনী খামেনেয়ী
سید علی حسینی خامنه‌ای
আলী খামেনেয়ী: প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা, ভাষাগত দক্ষতা ও সাহিত্যানুরাগ, রাজনৈতিক জীবন
২০২০ সালে খামেনেয়ী
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
৪ জুন ১৯৮৯
কার্যনির্বাহ: ৪ জুন – ৬ আগস্ট ১৯৮৯
রাষ্ট্রপতি
পূর্বসূরীরুহুল্লাহ খোমেনী
ইরানের ৩য় রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
৯ অক্টোবর ১৯৮১ – ১৬ আগস্ট ১৯৮৯
প্রধানমন্ত্রীমীর-হোসেইন মুসাওয়ী
সর্বোচ্চ নেতারুহুল্লাহ খোমেনী
পূর্বসূরীমোহাম্মদ-আলী রাজায়ী
উত্তরসূরীআকবর হাশেমী রফসঞ্জানী
যুক্তিসিদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তি পরিষদের ১ম সভাপতি
কাজের মেয়াদ
৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ – ৪ জুন ১৯৮৯
নিয়োগদাতারুহুল্লাহ খোমেনী
পূর্বসূরীদফতর প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীআকবর হাশেমী রফসঞ্জানী
বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৫ আগস্ট ১৯৮৩ – ৪ জুন ১৯৮৯
সংসদীয় এলাকাতেহরান প্রদেশ
সংখ্যাগরিষ্ঠ২,৮০০,৩৫৩ (৮৭.৮%)
ইসলামি পরামর্শদাতা পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
২৮ মে ১৯৮০ – ১৩ অক্টোবর ১৯৮১
সংসদীয় এলাকাতেহরান, রে ও শেমিরানাত
সংখ্যাগরিষ্ঠ১,৪০৫,৯৭৬ (৬৫.৮%)
তেহরানের জুমা নামাজের ইমাম
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১৪ জানুয়ারি ১৯৮০
নিয়োগদাতারুহুল্লাহ খোমেনী
অন্তর্বতীকালীন ইমামগণ
তালিকা
  • আহমদ জান্নাতী
    আহমদ খাতমী
    কাজেম সেদ্দিকী
    আলী মোওয়াহেদী-কেরমানী
    মোহাম্মদ-হাসান আবুতোরাবী ফর্দ
    মোহাম্মদ জওয়াদ হাজ আলী আকবরী
পূর্বসূরীহোসেইন-আলী মোন্তাজেরী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মসৈয়দ আলী হোসেইনী খামেনেয়ী
(1939-07-16) ১৬ জুলাই ১৯৩৯ (বয়স ৮৪) (সনদের তারিখ)
(1939-04-19) ১৯ এপ্রিল ১৯৩৯ (বয়স ৮৪) (প্রকৃত তারিখ)
মাশহাদ, খোরাসান, ইরান
রাজনৈতিক দলনির্দলীয় (১৯৮৯ থেকে)
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
  • ইসলামি প্রজাতন্ত্রী দল (১৯৭৯–১৯৮৭)
  • সংগ্রামী ধর্মগুরু সমিতি (১৯৭৭–১৯৮৯)
দাম্পত্য সঙ্গীমনসুরে খোজাস্তে বাগেরজাদে (বি. ১৯৬৪)
সন্তান
  • মোস্তফা
  • মোজতবা
  • মাসুদ (ওরফে মোহসেন)
  • ময়সাম
  • হোদা
  • বোশরা
পিতামাতা
  • জওয়াদ খামেনেয়ী
  • খাদিজে মির্দামাদী
আত্মীয়স্বজনহাদী খামেনেয়ী (ভাই)
বাসস্থাননেতৃত্বের বাসভবন
স্বাক্ষরআলী খামেনেয়ী: প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা, ভাষাগত দক্ষতা ও সাহিত্যানুরাগ, রাজনৈতিক জীবন
ওয়েবসাইটenglish.khamenei.ir
ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্মইসলাম
আখ্যাশিয়া
সম্প্রদায়উসুলি
ব্যবহারশাস্ত্রজাফরি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসইসনা আশারিয়া
প্রধান আগ্রহউসুল আল-ফিকহ, তাফসীর
উল্লেখযোগ্য ধারণাপারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে আলী খামেনেয়ীর ফতোয়া
সুন্নি ইসলামের সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের অবমাননার বিরুদ্ধে আলী খামেনেয়ীর ফতোয়া
যেখানের শিক্ষার্থী
  • খোরাসান হওজা
  • নাজাফ হওজা
  • কোম হওজা
মুসলিম নেতা
যার দ্বারা প্রভাবিত
সামরিক কর্মজীবন
আনুগত্যআলী খামেনেয়ী: প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা, ভাষাগত দক্ষতা ও সাহিত্যানুরাগ, রাজনৈতিক জীবন ইরান
সেবা/শাখাইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী
অনিয়মিত যুদ্ধবিগ্রহ দফতর
কার্যকাল১৯৭৯–৮০; ১৯৮০–৮১
নেতৃত্বসমূহবিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর প্রধান
যুদ্ধ/সংগ্রামইরান-ইরাক যুদ্ধ
  • অপারেশন সামেনুল আইমে

খামেনেয়ীর দাফতরিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির শাসনামলে তিন বছরের জন্য নির্বাসনে পাঠানোর পূর্বে তাঁকে ছয়বার গ্রেফতার করা হয়।

ইসলামি বিপ্লবের পর ১৯৮১ সালের জুনে তাঁকে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়, যার ফলে তাঁর ডানহাত অসাড় হয়ে পড়ে। ১৯৮০-র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধকালীন খামেনেয়ী ইরানের অন্যতম নেতা ছিলেন এবং সেই সময় তিনি অধুনা শক্তিশালী ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলেন।

এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এবং এর কমান্ডারদের নির্বাচন ও অপসারণ তিনি করে থাকেন। খামেনেয়ীর বিরোধীদের দমনের ক্ষেত্রে বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীকে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত খামেনেয়ী ইরানের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন ও প্রথম সর্বোচ্চ নেতা রুহুল্লাহ খোমেনীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। মৃত্যুর অনতিবিলম্ব পূর্বে খোমেনী কর্তৃক মনোনীত তাঁর উত্তরসূরী হোসেইন আলী মোন্তাজেরীর সঙ্গে একটি মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী কে হবেন সে ব্যাপারে কোনো ঐক্যমত্য ছিল না।

১৯৮৯ সালের ৪ জুন বিশেষজ্ঞ পরিষদ ৪৯ বছর বয়সী খামেনেয়ীকে পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নির্বাচন করে। আকবর হাশেমী রফসঞ্জানীর মতে মৃত্যুর পূর্বে খোমেনী তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে খামেনেয়ীকে মনোনীত করে গিয়ে ছিলেন। ১৯৭৯ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে খামেনেয়ী আস্তান কুদস রাজাওয়ীর সেবকদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনেয়ী ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ, ফরমান জারিকারী এবং অর্থনীতি, পরিবেশ, পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় পরিকল্পনা প্রভৃতি খাতে সরকারি নীতিনির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহীতা। করিম সাজ্জাদপুরীর মতে সরকারের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পাশাপাশি সামরিক বাহিনী ও গণমাধ্যমের ওপর খামেনেয়ীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ পরিষদ, রাষ্ট্রপতি ও মজলিসের (আইনসভা) সকল পদপ্রার্থীরা অবিভাবক পরিষদ দ্বারা পুননীরিক্ষিত হন, আর এই অবিভাবক পরিষদের সদস্যগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা কর্তৃক মনোনীত হন। এরকম ঘটনাও ঘটেছে যেখানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর অবিভাবক পরিষদের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও খামেনেয়ীর নির্দেশে তা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফোর্বস সাময়িকী ২০১২ সালে তাঁকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ২১ জন ব্যক্তির তালিকায় স্থান দেয়। খামেনেয়ী পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে ফতোয়া জারি করে বলেন যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার ইসলামি বিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী খামেনেয়ী ১৯৩৯ সালের ১৫ জুলাই মাশহাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খামেনেয়ী ‘সৈয়দ’ খেতাব ধারণ করেন যা সরাসরি বংশানুক্রমে ইমাম আলী ইবনে আবু তালিব হতে পাওয়া। খামেনেয়ীর পূর্বপুরুষদের বেশিরভাগই বর্তমান ইরানের তাফরেজ থেকে আগত এবং তারা দেশান্তরিত হয়ে তাবরিজ শহরে বসবাস শুরু করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ জওয়াদ খামেনেয়ী এবং মাতার নাম খাদিজা মিরদামাদী। মা-বাবার আট সন্তানের মধ্যে খামেনেয়ী দ্বিতীয়, এর মধ্যে তার দুই ভাই-ই ধর্মগুরু। তার ছোট ভাই হাদী খামেনেয়ী একটি ইরানি সংবাদপত্রের সম্পাদক ও ধর্মগুরু।

প্রথম বয়সে খামেনেয়ী তার গুরুগণ, যেমন: শেখ হাশেম কজভিনি এবং আয়াতুল্লাহ মিলানির কাছে ধর্মশিক্ষায় দীক্ষিত হন। ১৯৫৭ সালে মাশহাদ ত্যাগ করে তিনি বর্তমান ইরাকের শহর নাজাফের উদ্দেশে রওনা হন। কিছু দিন নাজাফে থাকার পর তিনি কোম শহরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ইসলামি সামরিক একাডেমিতে ধর্মতত্ত্ব শেখেন। এই সময় তার সতীর্থ ছিলেন রুহুল্লাহ খোমেনী। এরপরে তিনি ১৯৬৩ সালে ইসলামী কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং এর জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়। আলী খামেনেয়ী সোভিয়েত ইউনিয়নের পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়া থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন, যদিও এই বিষয়ে তার ওয়েবসাইটে কোনও কিছুর উল্লেখ নেই।

ভাষাগত দক্ষতা ও সাহিত্যানুরাগ

অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কদের তুলনায় খামেনেয়ীর ভাষাগত দক্ষতা ও সাহিত্য অনুরাগ একটু বেশিই বলা চলে। খামেনেয়ী উত্তম আরবি বলতে পারেন এবং তার মাতৃভাষা হচ্ছে ফার্সি। তিনি ফার্সিতে একধিক আরবি বই অনুবাদ করেছেন, এর মধ্যে বিখ্যাত মিশরীয় ইসলামী চিন্তাবিদ সৈয়দ কুতুবের কাজও রয়েছে। তিনি তার পিতার মাতৃভাষা আজারবাইজানিতেও মোটামুটি শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারেন এবং কিছুটা ইংরেজি বোঝেন।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর, তিনি পর পর সংস্কার কমিশনের সদস্য, উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সংস্কার রক্ষী বাহিনীর সেনাপ্রধান, তেহরানের ইসলামী ধর্মীয় নেতা, ইসলামী সংসদের স্পিকার ও সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা কমিশনে খোমেনীর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দ আলী খামেনেয়ী ইরানি বিপ্লব চলাকালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা এবং বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি খোমেনীর নেতৃত্বে রাজা মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযানে অংশ নেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি বহুবার গ্রেফতার হন। ১৯৭৮ সালে তিনি বিদেশে আশ্রয় নেন।

১৯৮১ সালের জুন মাসে খুব কাছ থেকে হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা থেকে পালাতে সক্ষম হন, যখন তিনি সংবাদ সম্মেলন করছিলেন কাছাকাছি থাকা একটি টেপরেকর্ডার বোমা তার পাশে বিস্ফোরিত হয়। এর জন্য তার মূল্য দিতে হয়। তিনি তার ডান হাতের কার্যক্ষমতা সারাজীবনের জন্য হারান।

প্রার্থী ভোট %
সৈয়দ আলী হোসেনী খামেনেয়ী ১,৬০,০৩,২৪২ ৯৫.০২%
আলী আকবর পারভারেস ৩,৪২,৬০০ ২.০৩%
হাসান গৌফিরাদ ৭৮,৫৫৯ ০.৪৭%
রেজা জাভেরি ৬২,১৩৩ ০.৩৭%
ফাঁকা অথবা অকার্যকর ভোট ৩,৫৬,২৬৬ ২.১২%
মোট ১,৬৮,৪১,৮০০

১৯৮১ সালে মোহাম্মাদ আলি রাজাজি হত্যার পর, ওই বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ইরানের ৩য় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আলী খামেনেয়ী ব্যাপক ব্যবধানে ধর্মীয় নেতা হিসেবে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে ইরানের ৯৫ শতাংশের উপরে অর্থাৎ ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তাকে ভোট দেয়। রুহুল্লাহ খোমেনী চেয়েছিলেন ধর্মীয় নেতাদের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে আলাদা রাখতে, পরে অবশ্য তাকে মত বদলাতে হয়।

খামেনেয়ী তার দেশ ইরানকে ১৯৮০র দশকে সংঘটিত ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হন। এই যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের ইরাক বর্তমান ও পূর্বের পরাশক্তিগুলোর সমর্থন পেলেও কৌশলগত দিক থেকে তারা ইরানের কাছে পরাজয় বরণ করে।

আলি খামেনেয়ী রুহুল্লাহ খোমেনীর উত্তরসূরি হিসেবে খোমেনীর মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালের ৪ জুন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

পরমাণু ক্ষমতা

খামেনেই পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে ফতোয়া জারি করে বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ইসলাম মোতাবেক নিষিদ্ধ। ইরানের পরমাণু কার্যক্রম বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিতর্কের অংশ। ইসরায়েল ও ইসরায়েলরপন্থী কিছু পশ্চিমা দেশের অভিযোগ যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে অন্যদিকে ইরানের দাবি তাদের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশ তাদের দাবি এখন পর্যন্ত পুরো প্রমাণ করতে সক্ষম না হওয়াতেও ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে।

দেশীয় নীতি

অনেকের মতে খামেনেয়ী রক্ষণশীল ইরানের প্রতিষ্ঠাতা। খামেনেয়ী দেশটির সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, বিচার বিভাগ, জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশনের প্রধান।

খামেনেয়ী পারমাণবিক ব্যবহার সম্পর্কে বলেন যে, তিনি বেসামরিক কাজে পারমাণবিক পদক্ষেপে বিশ্বাসী, কারণ তেল আর গ্যাস চিরকাল মজুদে থাকতে পারে না।

৩০ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে সৈয়দ আলি খামেনেয়ী আহমাদিনেজাদের অর্থনৈতিক নীতি সমর্থন দিয়ে বলেন, "পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক “সঙ্কট” ইরনের চেয়ে বেশি ঘনীভূত, যুক্তরাষ্ট্রইউরোপ প্রতিনিয়ত মুদ্রাস্ফীতিসহ আরও অনেক বাণিজ্যিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে।"

বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি

খামেনেয়ী ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অন্যতম সহায়কারী ও সমর্থক। তিনি অন্যতম প্রথম ধর্মীয় নেতা যারা বিভিন্ন জৈবিক গবেষণা অণুমোদন ও সমর্থন দেন। ২০০৪ সালে খামেনেয়ী বলেন, একটি দেশের উন্নয়ন সেই দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে।

মানবাধিকার

মানবাধিকারকে ইসলামী শিক্ষার মূল বিষয় হিসেবে অভিহিত করেন আলী খামেনেয়ী। তিনি বলেন ইসলামী মানবাধিকার বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং ন্যায়বিচার পাবার অধিকার দেয়। তিনি পশ্চিমাদের কঠোর সমলোচনা করেন যারা ইসলামী গণতন্ত্রকে জনগণের উপর অর্থনৈতিক অত্যাচার আর স্বৈরশাসন হিসেবে আখ্যা দেয়।

পররাষ্ট্র নীতি

ইরানের পররাষ্ট্র নীতি সাধারণত খামেনেয়ীর সরাসরি সম্পৃক্ততা বা অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈদেশিক নীতি

আলী খামেনেয়ী: প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা, ভাষাগত দক্ষতা ও সাহিত্যানুরাগ, রাজনৈতিক জীবন 
খামেনেয়ী এবং রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন

২০০৬ সালের জুন মাসে সৈয়দ আলী খামেনেয়ী বলেন, "ইরান পারস্য উপসাগর থেকে শক্তি চালানে ব্যাহত করবে (বিশ্বের দৈনিক ২০ শতাংশের অধিক জ্বালানী তেলের সরবরাহ আসে ইরানি উপকূলের কাছাঁকাছি অবস্থিত পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি থেকে,) এর ফলে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সম্মুখহীন হতে পারে, তিনি অনড় থেকে বলেন তেহরান তার পরমাণু জ্বালানী তৈরির অধিকার থেকে সরে আসবে না।

১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭-এ আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী (রমজান মাসের প্রথম শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময়) ইরাকে হামলার জন্য জর্জ বুশ এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের “দায়ী” উল্লেখ করে বলেন, "আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের চেষ্টার করা হবে।" তিনি আরও যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাক হামলার পর “অন্ধ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের” জন্য দায়ী করেন। তিনি ইরাকের নিরাপত্তাহীনতার মূল কারণ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেন।

২০০৯ সালের ২১ মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা দুই চিরায়ত শত্রু ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক প্রবৃত্তি শুরু করার প্রস্তাব পাশ করেন। খামেনেয়ী এ সম্পর্কে বলেন যে আমেরিকার কথা পরিবর্তনই শুধু যথেষ্ট নয় এবং আরও বলেন, “আমরা দেখব এবং বিচার করব (নতুন মার্কিন প্রশাসনকে).........তারা পরিবর্তন করলে আমরাও আমদের মনোভাব পরিবর্তন করব।”

২০১১ সালের জুন মাসে খামেনেয়ী মার্কিন সরকারকে সন্ত্রাসবাদী বলে অভিযুক্ত করেন এবং সন্ত্রাসবাদের আমেরিকান সংজ্ঞা বাতিল করে দেন। তিনি উদ্ধৃত করে বলেন, “মার্কিন এবং ইউরোপীয় সরকারগুলো স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইরত ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসবাদী বলে অভিহিত করে।”

জুন ২০১২-তে তিনি আবারও বলেন “ঘৃণা করি পশ্চিমাদের।”

৯/১১ হামলার নিন্দা

সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ এর হামলার পর খামেনেয়ী এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের নিন্দা করেন এবং সারা পৃথিবীর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানান। কিন্তু এই ঘটনার জন্য আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে জোরালোভাবে সতর্ক করেন। তিনি এই বিষয়ে উদ্ধৃত করে বলেন, “গণহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক কাজ যেখানেই করা হোক না কেন বা যার দ্বারাই অপরাধ সংঘটিত হোক না কেন এবং যারাই এর শিকার হোক না কেন, সারা পৃথিবী জুড়েই এটি নিন্দনীয়।”

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে অবস্থান

২০০০ সালের ১৫-ই ডিসেম্বর সৈয়দ আলী হোসেনী খামেনেয়ী বলেন, “ক্ষতিকর টিউমার রাষ্ট্রকে (ইসরায়েল) এই অঞ্চল থেকে অপসারণ করা উচিত।” ওই অনুষ্ঠানেই তিনি একটি প্রস্তাব পেশ করে বলেন “ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে আসা উচিত এবং মুসলমান, খৃষ্টান ও ইহুদীরা (অভিবাসী ইহুদী ব্যতীত) ঠিক করে তাদের নিজেদের জন্য একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।” "

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে আলি খামেনেয়ী ছয় সন্তানের পিতা। তার এক পুত্র মুজতবা বিয়ে করেন গোলাম আলী হাদ্দাদ আদেলের কন্যাকে। খামেনেয়ী বলেছেন তিনি মাঝেমাঝে আমেরিকান সাময়িকী যেমন: টাইমনিউজউইক পড়ে থাকেন।

চিত্রসম্ভার

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

    দাপ্তরিক
    মিডিয়া
    ভিডিও

Tags:

আলী খামেনেয়ী প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাআলী খামেনেয়ী ভাষাগত দক্ষতা ও সাহিত্যানুরাগআলী খামেনেয়ী রাজনৈতিক জীবনআলী খামেনেয়ী দেশীয় নীতিআলী খামেনেয়ী পররাষ্ট্র নীতিআলী খামেনেয়ী ব্যক্তিগত জীবনআলী খামেনেয়ী চিত্রসম্ভারআলী খামেনেয়ী আরও দেখুনআলী খামেনেয়ী তথ্যসূত্রআলী খামেনেয়ী বহিঃসংযোগআলী খামেনেয়ীইরানফার্সি ভাষামধ্যপ্রাচ্যমোহাম্মদ রেজা পাহলভিশিয়া ইসলাম

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

কাতারসয়াই মানসিং স্টেডিয়ামম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবক্বিবলা পরিবর্তনঝড়ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪ভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাসহীহ বুখারীইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সএশিয়াতৃণমূল কংগ্রেসঐশ্বর্যা রাইময়মনসিংহ বিভাগটিকটকহামাসব্যবসাপাল সাম্রাজ্যঢাকা মেট্রোরেলপানিনিপুণ আক্তারভূগোলহেপাটাইটিস বিব্যাকটেরিয়াহৃৎপিণ্ডনাসিমা খান মন্টিবাংলাদেশ বিমান বাহিনীবেদব্যাসমাইকেল মধুসূদন দত্তফিলিস্তিনসমাজবিজ্ঞানশরীয়তপুর জেলামেয়েঅষ্টাঙ্গিক মার্গভারতের জনপরিসংখ্যানক্লাউড কম্পিউটিংঢাকা জেলাহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)প্রান্তিক উপযোগনিমঅলিউল হক রুমিম্যাকবেথপানি দূষণগারোবাইসনমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রশিক্ষকমহেন্দ্র সিং ধোনিযাকাতঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েমিজানুর রহমান আজহারীসমাজতন্ত্রজাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাওঁ নমঃ শিবায়অশ্বত্থামাযিনাঅশ্বত্থফজরের নামাজমুসাফিরের নামাজপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশনের তালিকামুহাম্মদ ইকবালঅপারেশন সার্চলাইটসানি লিওনবিশ্ব পরিবেশ দিবসচিকিৎসকপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাহামরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)লোকসভা কেন্দ্রের তালিকাহনুমান জয়ন্তীফুটবল ক্লাব বার্সেলোনাশক্তিটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাবাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২বাংলাদেশের সংবিধানসুভাষচন্দ্র বসু🡆 More