আর্য (/ˈɛəriən/; ইন্দো-ইরানীয় *আরইয়া) হচ্ছে একটি প্রাচীন জাতিবিশেষ, এবং এটি হল একটি পরিভাষা যা প্রাচীনকালে ইন্দো-ইরানীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদেরকে দেওয়া একটি স্ব-পদবি, যা অ-ইন্দো-ইরানীয় বা অ-ইরানী বা অনার্য ব্যক্তিদের সঙ্গে তুলনা করে দেওয়া হয়েছে। আর্য হওয়ার ধারণাটি জাতিগত নয়, বরং ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত। যদিও এর মূলধাতু *h₂er(y)ós ('নিজ দলের সদস্য', বহিরাগতদের সঙ্গে তুলনা করে) হল খুবসম্ভব আদি-ভারতীয়-ইউরোপীয় ভাষা থেকে এসেছে, নৃগোষ্ঠীয়-সাংস্কৃতিক স্ব-পদবি হিসেবে আর্য শব্দটি শুধুমাত্র ইন্দো-ইরানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযুক্ত, আর আদি-ভারতীয়-ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদেরকে কখনো এই উপাধিতে ভূষিত করেছে বলে কখনো জানা যায় নি। প্রাচীন ভারতে আর্য পরিভাষাটি বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভিত্তিতে ইন্দো-আর্যদের ভাষাভাষীদের মধ্যে ব্যবহৃত হতো। এছাড়াও ভৌগোলিক অঞ্চলের নামেও যেমন আর্যবত্ত যেখানে ইন্দো-আর্যদের সংস্কৃতির ব্যুৎপত্তি হয়েছিল পরিচিত হতো।
আর্য (সং. √ঋ+য) হচ্ছে, একজন শ্রদ্ধেয় বা সম্মানিত বা বিশ্বস্ত মানুষ, আর্যাবর্তের বাসিন্দা । যিনি তার দেশের ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত । উদার । মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে যে (আর্যভাষী) জাতি এসেছিল ।
ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা বলেন, আর্যগণ প্রথমে পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা দলবদ্ধ হয়ে অনেকগুলো পশু সাথে নিয়ে ঘাস আচ্ছাদিত অঞ্চল বা প্রদেশে গমন করতেন। পরে সে স্থানের ঘাস পশু খাদ্য হিসেবে নিঃশেষিত হলে তারা পুনরায় অন্য অঞ্চল বা প্রদেশে যেতেন। এভাবে তারা প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করতেন বলে আর্য (অর্থাৎ গমনশীল) নামে পরিচিত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আর্যগণ নিরন্তর এরূপ স্থান পরিবর্তন খুবই কষ্টদায়ক বিবেচনায় এনে এক স্থানে অবস্থানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং এ সমস্যা সমাধানের উপায় বের করার চেষ্টা চালায়। উপায় হিসেবে কৃষিকাজকেই তারা অধিক গুরুত্ব দিয়ে ফসল উৎপাদনে নিযুক্ত হয়। এজন্যই তারা আর্য (অর্থাৎ কৃষিজীবী) নামে প্রসিদ্ধ হন। শেষোক্ত পক্ষের মতবাদে আর্য শব্দের অর্থ দাঁড়ায় কৃষিকর্মকারী, কারণ ও ধাতুর কর্ষণার্থও আছে।
আর্যরা ভারতবর্ষে খ্রিষ্টের জন্মের অনুমানিক ৫ হাজার পূর্বে বিহারের পঞ্ছনদের পাদদেশে আগমন করেন ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রগ্রন্থে কতগুলো উৎকৃষ্ট গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে আর্য শব্দে নির্দেশ করা হয়েছে।
ন তেন আরিয়ো হোতি যেন পাপানি হিংসতি অহিংসা সব্বপাণানং আরিয়োতি পবুচ্চতি [ত্রিপিটক, ধম্মপদ ১৯/২৭০]
বঙ্গানুবাদঃ প্রানী হিংসা করলে কেউ আর্য হতে পারে না, যে সকল প্রাণীতে অহিংসা দৃষ্টি রাখেন তাকেই আর্য বলে।
বৌদ্ধশাস্ত্র অনুসারে নির্বাণলাভের প্রধান আটটি নীতিকে একত্রে বলা হয় আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। কোন কোন গ্রন্ধে হিন্দুধর্মাবলম্বী লোকমাত্রেই অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র - এ চার বর্ণের লোকই আর্য বলে লিপিবদ্ধ আছে। আবার, কোন কোন গ্রন্থে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য - এ তিন বর্ণকে আর্য এবং চতুর্থ বর্ণকে শূদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এতে কেউ কেউ অনুমান করেন যে, শূদ্র বর্ণ আর্যবংশের নয়; আর্যেরা ভারতবর্ষে এসে শূদ্রনামক অনার্য জাতিবিশেষকে নিজেদের সমাজভূক্ত করে নেন। কিন্তু সেই অনার্য শূদ্র যে কারা, তা আজ অবধি কেউই নির্ণয় করতে পারেন নাই। ফলে, এ বিষয়ের কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ নির্ণিত হয় নাই।
ইন্দো-আর্য অভিপ্রায়ণ মডেল ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে থেকে এসেছিল এই তত্ত্বকে ঘিরে দৃশ্যকল্পকে ব্যাখ্যা করে, যেখানে ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী হচ্ছে সেই আরোপিত জাতিভাষাভিত্তিক গোষ্ঠী যারা ইন্দো-আর্য ভাষায় কথা বলেন। এই ইন্দো-আর্য ভাষাগুলো উত্তর ভারতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে ইন্দো-আর্য উৎপত্তি - এই তত্ত্বের প্রবক্তাগণ সাধারণত এটাই বিবেচনা করেন যে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং আনাতোলিয়ায় (প্রাচীন মিতানি) ইন্দো-আর্যগণ মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিলেন, হরপ্পা যুগের শেষ সময়ে প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ধীরে ধীরে এই অভিপ্রায়ণ শুরু হয়েছিল, এবং এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চলে ভাষা-পরিবর্তন ঘটে। ইরানে ইরানীয়গণ ইরানীয় ভাষাসমূহ নিয়ে আসেন, যেগুলো ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের নিকটাত্মীয়।
ইন্দো-আর্য এবং ইরানীয়দের জন্ম হয়েছিল প্রত্ন-ইন্দো-ইরানীয় সংস্কৃতি থেকে। ২১০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কাস্পিয়ান সাগরের উত্তরে মধ্য এশীয় স্তেপে সিনতাশ্তা সংস্কৃতি হিসেবে প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। সেই অঞ্চলে বর্তমান রাশিয়া এবং কাজাখস্তান অবস্থিত। পরবর্তীতে ১৮০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আরাল সাগরের চারপাশে তা এন্দ্রোনোভো সংস্কৃতি হিসেবে আরও বিকশিত হয়। এই প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয়রা দক্ষিণ দিকে অভিপ্রায়ণ করে ব্যাকট্রিয়া-মারজিয়ানা সংস্কৃতি তৈরি করে যেখান থেকে তারা তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আচার নিয়ে আসে। ১৮০০ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইন্দো-আর্যরা ইরানীয়দের থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরপর ইন্দো-আর্যরা আনাতোলিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া (বর্তমান আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল) এর উত্তরাঞ্চলে অভিপ্রায়ণ করে। অন্যদিকে ইরানীয়রা ইরানে অভিপ্রায়ণ করে। এই উভয় গোষ্ঠীই তাদের নিজেদের সাথে ইন্দো-ইরানীয় ভাষা নিয়ে আসে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article আর্য, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.