পর্যায় সারণি (যা মৌলসমূহের পর্যায় সারণি নামেও পরিচিত) যেখানে রাসায়নিক মৌলসমূহকে সারি (পর্যায়) এবং স্তম্ভ (গ্রুপ) আকারে সাজানো হয়। এটি রসায়নের একটি সংগঠিত প্রতীক এবং এটি পদার্থবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি পর্যায় আইনের একটি চিত্র, যা বলে যে যখন মৌলসমূহকে তাদের পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে সাজানো হয় তখন তাদের বৈশিষ্ট্যের একটি আনুমানিক পুনরাবৃত্তি স্পষ্ট হয়। সারণিটি চারটি আনুমানিক আয়তাকার এলাকায় বিভক্ত যাকে ব্লক বলা হয়। একই গ্রুপের মৌলসমূহ একই রকম রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
|
পর্যায় সারণিতে উল্লম্ব, অনুভূমিক এবং তির্যক প্রবণতা দেখা যায়। একটি গ্রুপে নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে ধাতব বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায় এবং একটি পর্যায়ে বাম থেকে ডান দিকে অতিক্রম করার সঙ্গে তা হ্রাস পায়। পর্যায় সারণির নিচের বাম থেকে উপরের ডান দিকে যাওয়ার সঙ্গে অধাতব বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায়।
১৮৬৯ সালে রুশ রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলেভ যে পর্যায় সারণিটি প্রণয়ন করেন তা সর্বপ্রথম সার্বজনীনভাবে গৃহীত হয়। তিনি পারমাণবিক ভরের ওপর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের নির্ভরতার ভিত্তিতে পর্যায় সারণিটি প্রণয়ন করেন। যেহেতু তখন সকল মৌল আবিষ্কৃত হয়নি, তাই তার পর্যায় সারণিতে অসম্পূর্ণতা ছিল এবং মেন্ডেলেভ সফলভাবে পর্যায় সারণি ব্যবহার করে কিছু অনুপস্থিত মৌলের কিছু বৈশিষ্ট্য পূর্বাভাস করেন। ১৯ শতকের শেষের দিকে পর্যায় সারণিকে মৌলিক আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০ শতকের শুরুতে এটি ব্যাখ্যা করা হয়, পারমাণবিক সংখ্যা আবিষ্কারের মাধ্যমে এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে সংশ্লিষ্ট অগ্রণী কাজের মাধ্যমে, উভয় ধারণাই পরমাণুর অভ্যন্তরীণ গঠনকে বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে। ১৯৪৫ সালে গ্লেন টি. সিবোর্গ আবিষ্কার করেন যে অ্যাক্টিনাইডগুলো আসলে d-ব্লক নয় বরং f-ব্লক মৌল, তারপর থেকে পর্যায় সারণিটির একটি আধুনিক রূপে পৌঁছানো হয়। পর্যায় সারণি এবং আইন এখন আধুনিক রসায়নের একটি কেন্দ্রীয় ও অপরিহার্য অংশ।
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পর্যায় সারণিটিও বিবর্তিত হতে থাকে। প্রকৃতিতে, পরমাণবিক সংখ্যা ৯৪ পর্যন্ত মৌলই বিদ্যমান; এর বেশি এগিয়ে যেতে, পরীক্ষাগারে নতুন মৌল সংশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আজ, যদিও প্রথম ১১৮টি মৌলই পরিচিত, তবে সারণিটি এখনও সম্পূর্ণ নয়। ১১৯ এবং ১২০ নম্বর পারমাণবিক সংখ্যার মৌলগুলোর অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে, এবং বিজ্ঞানীরা এই মৌলগুলো আবিষ্কারের জন্য কাজ করছেন।
সংযোজিত তথ্য, বিন্যাস ও জটিলতার ভিত্তিতে পর্যায় সারণির বেশ কয়েকটি রূপ রয়েছে যথা:
১৯৮৯ সালে ইউপ্যাকের (IUPAC - International Union Of Pure And Applied Chemistry) সিদ্ধান্তক্রমে মৌলের সর্ববহিঃস্থস্তরের ইলেক্ট্রন সংখ্যা অনুযায়ী মৌলের শ্রেণীসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। আর এভাবেই সর্বাধুনিক পর্যায় সারণির পত্তন ঘটে। এতে মোট ১৮টি শ্রেণী এবং ৭টি পর্যায় রয়েছে। এতে পর্যায়সমূহকে ইংরেজি ১,২,৩,৪,৫,৬,৭ সংখ্যা দ্বারা এবং শ্রেণীসমূহকে রোমান হরফের বদলে ইংরেজি ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,১০,১১,১২,১৩,১৪,১৫,১৬,১৭,১৮ সংখ্যাগুলো দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।
কোন মৌল সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে উক্ত মৌলের নামের উপর ক্লিক করুন
শ্রেণী → | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
↓ পর্যায় | |||||||||||||||||||
১ | ১ H | ২ He | |||||||||||||||||
২ | ৩ Li | ৪ Be | ৫ B | ৬ C | ৭ N | ৮ O | ৯ F | ১০ Ne | |||||||||||
৩ | ১১ Na | ১২ Mg | ১৩ Al | ১৪ Si | ১৫ P | ১৬ S | ১৭ Cl | ১৮ Ar | |||||||||||
৪ | ১৯ K | ২০ Ca | ২১ Sc | ২২ Ti | ২৩ V | ২৪ Cr | ২৫ Mn | ২৬ Fe | ২৭ Co | ২৮ Ni | ২৯ Cu | ৩০ Zn | ৩১ Ga | ৩২ Ge | ৩৩ As | ৩৪ Se | ৩৫ Br | ৩৬ Kr | |
৫ | ৩৭ Rb | ৩৮ Sr | ৩৯ Y | ৪০ Zr | ৪১ Nb | ৪২ Mo | ৪৩ Tc | ৪৪ Ru | ৪৫ Rh | ৪৬ Pd | ৪৭ Ag | ৪৮ Cd | ৪৯ In | ৫০ Sn | ৫১ Sb | ৫২ Te | ৫৩ I | ৫৪ Xe | |
৬ | ৫৫ Cs | ৫৬ Ba |
| ৭২ Hf | ৭৩ Ta | ৭৪ W | ৭৫ Re | ৭৬ Os | ৭৭ Ir | ৭৮ Pt | ৭৯ Au | ৮০ Hg | ৮১ Tl | ৮২ Pb | ৮৩ Bi | ৮৪ Po | ৮৫ At | ৮৬ Rn | |
৭ | ৮৭ Fr | ৮৮ Ra |
| ১০৪ Rf | ১০৫ Db | ১০৬ Sg | ১০৭ Bh | ১০৮ Hs | ১০৯ Mt | ১১০ Ds | ১১১ Rg | ১১২ Cn | ১১৩ Nh | ১১৪ Fl | ১১৫ Mc | ১১৬ Lv | ১১৭ Ts | ১১৮ Og | |
* ল্যান্থানাইড সারি | ৫৭ La | ৫৮ Ce | ৫৯ Pr | ৬০ Nd | ৬১ Pm | ৬২ Sm | ৬৩ Eu | ৬৪ Gd | ৬৫ Tb | ৬৬ Dy | ৬৭ Ho | ৬৮ Er | ৬৯ Tm | ৭০ Yb | ৭১ Lu | ||||
** অ্যাক্টিনাইড সারি | ৮৯ Ac | ৯০ Th | ৯১ Pa | ৯২ U | ৯৩ Np | ৯৪ Pu | ৯৫ Am | ৯৬ Cm | ৯৭ Bk | ৯৮ Cf | ৯৯ Es | ১০০ Fm | ১০১ Md | ১০২ No | ১০৩ Lr |
পর্যায় সারণীর রাসায়নিক শ্রেণীসমূহ
ধাতু | ধাতুকল্প | অধাতু | অজানা রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য | |||||||
ক্ষার ধাতু | মৃৎ ক্ষার ধাতু | অভ্যন্তরীণ রূপান্তর ধাতু | অবস্থান্তর ধাতু | উত্তোলন পরবর্তী ধাতু | অন্যান্য অধাতু | হ্যালোজেন | নিষ্ক্রিয় গ্যাস | |||
ল্যান্থানাইড | অ্যাক্টিনাইড |
আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপ (০°সে. এবং ১ atm) ধর্তব্য
দ্রষ্টব্য: ক্যালিফোর্নিয়াম (Cf) নামক মৌলটি যদিও পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়না, তথাপি ক্যালিফোর্নিয়াম এবং এর তেজস্ক্রিয় ভাঙনের মাধ্যমে সৃষ্ট অন্যান্য কিছু মৌল মহাবিশ্বের অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায়। বিভিন্ন সুপারনোভা থেকে প্রাপ্ত * বর্ণালীতে এ মৌলসমূহের তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ রেখার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
উপশক্তিস্তর: | s | p | d | f | g |
পর্যায় | |||||
১ | ১s | ||||
২ | ২s | ২p | |||
৩ | ৩s | ৩p | |||
৪ | ৪s | ৪p | ৩d | ||
৫ | ৫s | ৫p | ৪d | ||
৬ | ৬s | ৬p | ৫d | ৪f | |
৭ | ৭s | ৭p | ৬d | ৫f | |
৮ | ৮s | ৮p | ৭d | ৬f | ৫g |
৯ | ৯s | ৯p | ৮d | ৭f | ৬g |
পর্যায় সারণিতে অবস্থিত মৌলগুলোর কিছু ধর্ম আছে যেমন: ধাতব ধর্ম, অধাতব ধর্ম, পরমাণুর আকার, আয়নিকরণ শক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা, ইলেকট্রন আসত্তি ইত্যাদি। এসব ধর্মকে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বলে |
যে সকল মৌল কোনো কোনো সময় ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং কোনো কোনো সময় ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাদেরকে উপধাতু বলে।
পর্যায় সারণির যেকোনো একটি পর্যায়ের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, বাম দিকের মৌলগুলো সাধারণত ধাতু, মাঝের মৌলগুলো সাধারণত অর্ধধাতু বা উপধাতু এবং ডান দিকের মৌলগুলো সাধারণত অধাতু।
একই পর্যায়ের বাম দিক থেকে যত ডান দিকে যাওয়া যায় পারমাণবিক সংখ্যা তত বাড়তে থাকে কিছু প্রধান শক্তিস্তরের সংখ্যা বাড়ে না। পারমাণবিক সংখ্যা বাড়লে নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং ইলেকট্রন সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। নিউক্লিয়াসের অধিক প্রোটন সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরের অধিক ইলেকট্রন সংখ্যার মধ্যে আকর্ষণ বেশি হয় ফলে ইলেকট্রনগুলোর শক্তিস্তর নিউক্লিয়াসের কাছে চলে আসে, ফলে পরমাণুর আকার ছোট হয়ে যায়।
একই গ্রুপে যতই উপর থেকে নিচের দিকে যাওয়া যায় ততই বাইরের দিকে একটি করে নতুন শক্তিস্তর যুক্ত হয়। একটি করে নতুন শক্তিস্তর যুক্ত হলে পরমাণুর আকার বৃদ্ধি পায়।
একই গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে গেলে নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা এবং বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রন সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আকর্ষণ বৃদ্ধি হয়ে পরমাণুর আকার যতটুকু হ্রাস পায়, নতুন একটি শক্তিস্তর যোগ হওয়ার কারণে পরমাণু আকার তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। যে কারণে উপরের মৌলের চেয়ে নিচের মৌলের আকার বড় হয়।
১৭৮৯ সালে রসায়নবিদ অঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৩৩ টি রাসায়নিক উপাদানকে ধাতু ও অধাতু, এই দুইভাগে বিভক্ত করেন। যদিও লাভোয়াজিয়ের সমসাময়িক রসায়নবিদগণ আরও উন্নত শ্রেণীবিন্যাসকরণ পদ্ধতির সন্ধান করছিলেন।
১৮২৯ সালে জার্মান রসায়নবিদ ইয়োহান ভোলফগাং ডোবেরেইনার প্রমাণ করেন, তিনটি করে মৌল একই ধর্ম প্রদর্শন করে। তিনি প্রথমে পারমাণবিক ভর অনুযায়ী তিনটি করে মৌল সাজিয়ে মৌলের একটি সারণি তৈরি করেন। ডোবেরেইনার আরো প্রমাণ করেন, ২য় মৌলের পারমাণবিক ভর ১ম ও ৩য় মৌলের পারমাণবিক ভরের অর্ধেক বা গড়ের সমান অথবা কাছাকাছি।একে ডোবেরেইনারের ত্রয়ীসূত্র বলে।
ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী বিজ্ঞানী জন নিউল্যান্ড ১৮৬৪ সালে তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলগুলোকে তাদের ভর অনুসারে সাজিয়ে মৌলগুলোর প্রতি অষ্টম মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মিল পান।
পরবর্তীকালে ১৮৬৯ সালে রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফের সকল মৌলের জন্য একটি সাধারণ পর্যায় সূত্র আবিষ্কার করেন, যা হলো- "মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সঙ্গে পর্যায় ক্রমে আবর্তিত হয়"। উক্ত সূত্রানুসারে তিনি ও জার্মান বিজ্ঞানী ইউলিয়ুস লোটার মাইয়ার মিলে আধুনিক পর্যায় সারণি প্রকাশ করেন। তখন ৬৭ টি মৌল নিয়ে পর্যায় সারণি গঠিত হয়েছিল যার মধ্যে ৬৩ টি আবিষ্কৃত হয়েছিলো। ১৯০০ সালের মধ্যে আরও ৩০ টি মৌল পর্যায় সারণিতে যুক্ত হয়। এভাবেই সূচনা হয় আধুনিক পর্যায় সারণির।
প্রথমদিকে পারমাণবিক ভরের উপর নির্ভর করে পর্যায় সারণি সাজানো হয়েছিল। কিন্তু এতে মৌলের ধর্মের শ্রেণিবিন্যাসকরণে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। ১৯১৩ সালে রসায়নবিদ হেনরি মোসলে পারমাণবিক ভরের বদলে পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী মৌলসমূহকে সাজানোর প্রস্তাব দেন। বর্তমানে আধুনিক পর্যায় সারনির জনক তাকে বলা হয়
রসায়ন অধ্যয়ন, নতুন মৌল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী, গবেষণা ইত্যাদিতে পর্যায় সারণি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার কয়েকটি উদাহরণ হলো:
বিকল্প পর্যায় সারণি হলো মৌলসমূহের একটি ছক যা মূল পর্যায় সারণি থেকে ভিন্ন হয়। এখন পর্যন্ত হাজারেরও বেশি বিকল্প সারণি প্রস্তাব করা হয়েছে, কারণ মৌলসমূহের মধ্যকার সকল পারস্পরিক সম্পর্ক সবসময় নিয়মিত ব্যবহার্য পর্যায় সারণি দিয়ে উপলব্ধি করা যায় না।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article পর্যায় সারণি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.